ধানের বিভিন্ন রোগের নাম,লক্ষণ ও প্রতিকার
১।রোগের নামঃ
ধানের লক্ষীর গু রোগ False Smut Disease (Ustilaginoidea virens)
লক্ষণঃ
এটি বীজ বাহিত।
এ রোগ বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়।
এ রোগ ধানের দুধ অবস্থা হতে ধান পাকার সময পর্যন্ত দেখা যায়।
ছত্রাকটি একটি সবুজ সোনালী রঙের বলের ন্যায় দেখতে।
· চিকন ও সরু জাতীয় আমন ধানে এ রোগ বেশী হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহার করা।
- রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- শীষ বের হবার সময় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যথা- কুপ্রাভিট (০.৪%), প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি ০.১%), ব্যাভিষ্টিন (০.১%)।
২।রোগের নামঃ
ধানের ব্লাস্ট রোগ Blast Disease (Pyricularia oryzae)
লক্ষণঃ
- এ রোগ ধান গাছের তিনটি অংশ আক্রমণ করে যথা- পাতা, কান্ড, ও শীষ।
- প্রথমে পাতায় ছোট ছোট ডিম্বকৃতির দাগ সৃষ্টি হয় যা পরে দু’প্রান্তে লম্বা হয়ে চোঁখের মত দেখায়।
- দাগের চারিদিকের প্রান্ত গাঢ় বাদামী রঙের হয় এবং মধ্যভাগ সাদা ছাই রঙের ধোয়। অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে পাতা ঢেকে ফেলতে পারে।
- ফসল এ রোগ কান্ডের গিট আক্রান্ত হয় এবং কালো দাগ পড়ে। আক্রমণ বেশী হলে কান্ড ভেঙ্গে পড়ে।
- একই ভাবে দুধ অবস্থায শীষের গোড়ায় পচন দেখা দিতে পারে, শীষ ভেঙ্গে পড়ে ফলে ধান চিটা হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- ভাল বীজ ব্যবহার করা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা যথাঃ বিআর ১৫,১৬,২৩,২৫, ও ব্রিধান- ২৮,৩৩।
- বীজতলা বা জমি ভেজা রাখা।
- ইউরিয়া কম ও পটাশ সার বেশী ব্যবহার করা।
- বীজ শোধন করা যথা প্রোভেবা ভিটাফ্লো ২০০ (২.৫-৩ গ্রাম/কেজি বীজ)।
- রোগ দেখা দিলে ছত্রাকণাশক ব্যবহার করা যথা এডিফেন ০.২%, হোমাই ০.২%, কার্বেন্ডাজিম ০.১% (ব্যাভিষ্টিন/ অটোস্টিন) বা কুপ্রাভিট ০.৪% বা নাটিভো ০.৪% বা ট্রুপার ০.৪৫ হারে চারা ও থোড় অবস্থায় স্প্রে করা।
৩।রোগের নামঃ
ধানের টুংরো রোগ Tungro Disease of Rice (ভাইরাসজনিত রোগ)।
লক্ষণঃ
- চারা অবস্থায় এ রোগের আক্রমণ শুরু হয়।
- আক্রান্ত পাতায় লম্বালম্বি শিরা বরাবর হালকা সবুজ বা হালকা হলুদ রঙের রেখা দেখা যায়।
- ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ পাতা হলুদ বর্ণের খাটো গাছ দেখা যায়।
- জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে কমলা-হলুদ বা হলুদ বর্ণের খাটো গাছ দেখা যায়।
- ক্ষেতে বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং এর উপস্থিতি দেখা যায়।
- আক্রান্ত গাছের শিকড় দূর্বল হয় এবং গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ধানের জাত ব্যবহার করা যথাঃ বিআর- ১০,১১,১৪,১৬,২০,২২ এবং ব্রিধান- ২৪,৩৬,৩৭,৩৯,৪১।
- রোগক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তা শিকড় সহ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
- ক্ষেতের আশেপাশে আড়ালী ঘাস ও অন্যান্য আগাছা পরিস্কার করা।
- বীজতলায় বা জমিতে হাতজালের প্রতি একশ টানে ৪০-৫০ টা সবুজ পাতা ফড়িং পাওয়া গেলে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন – ডায়াজিনন ২ মিলি, সুমিথিয়ন-২ মিলি ডাইমেথোয়েট (রগর) ২ মিলি, ম্যালাথিয়ন- ২ মিলি মেটাসিস্টক্স-২ ব্যবহার করা।
৪।রোগের নামঃ
ধানের উফরা রোগ Ufra Disease of Rice (Ditylenchus angustus) কৃমিজনিত রোগ।
লক্ষণঃ
- এটি মাটি, রোগাক্রান্ত নাড়া ও খড়ে থাকে।
- এ কৃমি ধান গাছের আগার কচি অংশের রস শুষে খায়, ফলে প্রথম পাতার গোড়ায় অর্থ্যাাৎ পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে সাদা ছিাটা ফোটা দাগের ন্যায় দেখা যায়। সাদা দাগ ক্রমেই বাদামী রঙের হয় এবং পরে দাগগুলি বেড়ে সম্পূর্ণ পাতাটা শুকিয়ে ফেলে। ফলে অনেক সময় থোড় বা ছড়া বের হতে পারে না অথবা ছড়া ভিতরে কুচকানা বা মোছড়ানো অবস্থায় থাকে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- ফসল কাটার পর আক্রান্ত ক্ষেতের নাড়া পুড়ে নষ্ট করা।
- ধান ছাড়া ঐ জমিতে অন্যান্য ফসলের চাষ করা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতের পানি অন্য ক্ষেতে না দেওয়া।
- যেখানে সম্ভব বৎসরের প্রথম বৃষ্টির পর জমি চাষ দিয়ে ১৫-২০ দিন ফেলে রাখা (মাটি শুকালে কৃমি মারা যায়)
- ফুরাডান ৩ জি নামক দানাদার বালাইনাশক বিঘা প্রতি ৪.৫ কেজি চাষের সময় ব্যবহার করা।
৫।রোগের নামঃ
ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ Bacterial Leaf Streak (BLS) of Rice (Xanthomonas campestris pv. oryzaicola) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।
লক্ষণঃ
- এ রোগ সাধারণত পত্র ফলকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
- প্রথমে শিরা সমূহের মধ্যবর্তী স্থানে সরু ও হালকা দাগ পড়ে। ক্রমান্বয়ে দাগগুলো বড় হয়ে বাদামী রং ধারণ করে।
- পরবর্তীতে আক্রান্ত ধানের পাতা পুরোটাই বাদামী রঙের হয়ে যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- ফসল কাটার পর নাড়া পুড়ে ফেলা।
- ৫৪ সেঃ তাপমাত্রায় পানিতে ১৫ মিনিট ভিডিােয় রাখলে বীজ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হয়।
- প্রতি লিটার পানিতে ৪-৫ গ্রাম কুপ্রাভিট বা ২ গ্রাম চ্যাম্পিয়িন মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করা।
৬।রোগের নামঃ
ধানের পাতা পোড়া বা পাতা ঝলসানো রোগ Bacterial Leaf Blight (BLB) (Xanthomonas campestris pv. oryzae) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।
লক্ষণঃ
- এ রোগ চারায় এবং বয়স্ক গাছে দু’ধরণের লক্ষণ সৃষ্টি হয়।
- চারা অবস্থায় একে নেতিয়ে পড়া বা চারা পচা (ক্রিসেক) বলে এবং বয়স্ক অবস্থায় একে পাতাপোড়া রোগ বলে। চারার বাইরের পাতা হলদে হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে খড়ের রঙে পরিণত হয় ফলে নতুন পাতা ও তেমনি ভাবে শুেিকয় যায় এবং চারা নেতিয়ে পড়ে। চারার গোড়ায় হাত দ্বারা চাপ দিলে পুঁজের মত দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ বের হয়।
- বয়স্ক গাছে প্রথমে পাতার কিনারায় এবং আগায় ছোট ছোট জলছাপের মতো দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে পাতার দু’প্রান্ত দিয়ে নিচের বা ভিতরের দিকে অগ্রসর হয় আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হতে থাকে ও ধূসর বাদামী বর্ণে পরিণত হয় যা ঝলসানো বা পাতা পোড়া বলে মনে হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- · চারা উঠানোর সময ক্ষত না হওয়া।
- আক্রমণ প্রবণ জাত চাষ না করা।
- ইউরিয়া সার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা।
- সব ইউরিয়া চারা বা কুশি অবস্থায় না দিয়ে ২/৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করা।
- রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার পানি দেয়।
- চারা অবস্থায় রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত চারা তুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দিলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
- ধান কাটার পর জমিতে নাড়া ও কড় পুড়ে ফেলাপ।
- আক্রান্ত জমিতে ৫০-১০০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে বিকালে স্প্রে করা।
- পটাশ সার বিঘাপ্রতি ৫/৬ কেজি উপরি প্রয়োগ করা।
- কুশিকারৈ ঝড়ের পর পরই ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা।
- কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। প্রয়োজনে ১% বর্দোমিকচার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭।রোগের নামঃ
ধানের বাদামী রোগ Brown Spot Disease (Helminthosporium oryzae)
লক্ষণঃ
- এটি বীজ বাহিত রোগ।
- এ রোগ পাতা, বীজ ও বাড়ন্ত কান্ডে আক্রমণ করে।
- পাতায় ডিম্বকৃতির মতে ছোট ছোট বাদামী রঙের দাগ পড়ে।
- দাগগুলি ক্রমেই পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রমণ বেশী হলে শীষেও আক্রমন হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- ফসল কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে ফেলা।
- সুস্থ বীজ ব্যবহার করা।
- বীজ গরম পানিতে শোধন করা বা প্রোভেবা ভিটাফ্লো ২০০ (২.৫-৩ গ্রাম/কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন।
- রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন জাত ব্যবহার।
- বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা রাখা।
- জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউরিয়া ও পটাশ ব্যবহার করলে রোগ বাড়ে না।
৮।রোগের নামঃ
ধানের বাকানি রোগ Bakanae Disease (Fusarium moniliforme)
লক্ষণঃ
- দুই রকম লক্ষণ দেখা যায় ১ম টি গোড়াপচা দ্বিতীয়টি বাকানি।
- গোড়া পচা হলে গোড়ায় পচন ধরে, শিকড় বড় হয় না, ফলে গাছ দূর্বল হয়। গাছ খাটো এবং গাছের গোড়ায় সাদা বা গোলাপী ছত্রাক দেখা যায়।
- বাকনি হলে গাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় দুই/তিন গুণ লম্বা ও সরু হয়। গাছের কান্ডে গিট হয়। ফলন হয় না।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
· সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত গাছ হতে বীজ ব্যবহার করা ও বীজতলায় পানি ধারে রাখা।
· আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র তুলে নষ্ট করা।
· বিআর- ৩ বিআর-৪, বিআর-১০, বিআর-১১ প্রভৃতি ধানের জাত ব্যবহার করা।
· বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম হোমাই বা বেনলেট বা ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন দ্বারা শোধন করা।
৯।রোগের নামঃ
ধানের খোল পচা রোগ Sheath Rot Disease (Cerocladium oryzae)
লক্ষণঃ
- এ রোগ ধান গাছের ডিগ পাতার খোলে সাধারণত থোড় অবস্থায দেখা যায়।
- প্রথমে খোলে ছোট ছোট নানা আকারের বাদামী দাগ হয়।
- দাগগুলো আস্তে আস্তে বেড়ে একত্রে মিশে সমস্ত খোলে ছড়িয়ে পড়ে।
- এ অবস্থায় যদি শীষ বের হয় তাহরে ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়। অনেক সময় শীষ অর্ধেক বের হতে পারে বা একবারেই বের হতে পারে না।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- জমিতে ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করা।
- রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে কয়েকদিন পর আবার সেচের পানি দেয়া।
- প্রয়োজনের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যথাঃ ১ মিলি প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) বা নাটিভো, বা কনটাফ প্রতি লিটার পানিতে – এ হারে স্প্রে করা।
১০।রোগের নামঃ
ধানের খোলপোড়া রোগ Sheath Blight Disease (Rhizoctonia solani)
লক্ষণঃ
- কুশি গজানোর সময় প্রথমে ছোট গোলকার বা লম্বাটে ধরনের ধূসর রঙের জলছাপের মত দাগ পড়ে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হয়ে উপরের দিকে সমস্ত খোল ও পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
- দাগ গুলোর কেন্দ্রস্থল খয়েরী রং এবং পরিধি গাঢ় বাদামী রঙের হয়। এ অবস্থায় খোল দেখতে কিছুটা গোখড়া সাপের চামড়ার দাগের মত দেখায়।
- ইউরিয়া সার বেশি দিলে, আবহাওয়া গরম ও সেঁত-সেঁতে হলে এবং রোগ জীবাণু জমিতে থাকলে রোগ ছাড়ায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার যথাঃ বি আর- ১০,২২,২৩, এবং ব্রি-ধান ২৯,৩২,৩৯,৪১।
- ফসল কাঠার পর ক্ষেতের নাড়া পুড়ে ফেলা।
- সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা এবং ইউরিয়া ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করা।
- রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন রাখার পর আবার সেচ দেয়া।
- চারা একটু দুরে লগানো। (২০/২০ সেমি)।
- পটাশ সার ব্যবহার করা (প্রয়োজনে উপরি প্রয়োগ)।
- প্রয়োজনে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা। প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি ফলিফুর, ১ মিলি প্রোপিােকনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) বা কনটাফ ৫ ইসি বা স্কোর, ১ গ্রাম কার্বেনডাজিম (ব্যাভিষ্টিন), নাটিভো ০.৪ গ্রাম নাস্টার ১মিলি, ওপাল ২.৫মিলি।
১১।রোগের নামঃ
ধানের পাতা ফোস্কা রোগ Leaf Scald Disease of Rice
লক্ষণঃ
- পাতার আগায় বা কিনারায় বা অনেক সময় মাঝখানে পানি চোষা জলছাপের মত দাগ পড়ে ।
- দাগ গুলো ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে অনেকটা আয়তকার বা ডিম্বাকৃতি এবং অনেকটা জলপাই রঙের মত হয় ।
- দাগের ভেতর জেব্রার গায়ের মত ডোরাকাটা গাঢ় বাদামী চওড়া এবং হালকা বাদামী রেখা পর পর বেষ্টন করে ।
- বেশি আক্রমণে পাতা শুকিয়ে খড়ের মত হয় ।
নিশ্চিত হওয়ার পরীক্ষাঃ
আক্রান্ত পাতা কেটে স্বচ্ছ পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে যদি পুঁজ বা দুধ জাতীয় পদার্থ কাটা অংশ থেকে বের হয় তবে বুঝতে হবে এটা ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতা পোড়া রোগ আর যদি কোন কিছু বের না হয় তবে সেটা পাতার ফোস্কা রোগ ।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- জমি আগাছামুক্ত রাখা ।
- পরিমিত ইউরিয়া সার ব্যবহার করা ।
- অধিক আক্রমণের ক্ষেত্রে সালফার ছত্রাক নাশক ( যেমন: থিওভিট ) ১কেজি/একর হারে প্রয়োগ করা ।
- আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না
- কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ঔষধ দিয়ে বীজ শোধন । প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম এক লিটার পানিতে গুলে এক রাত ভিজিয়ে রাখা ।
- পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
- লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
- সুষম পরিমানে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করা।
- ধানের জাত অনুসারে সঠিক দুরত্বে চারা রোপণ করা (তবে ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বই ভাল)।
১২।রোগের নামঃ
ধানের গুড়িপচা রোগ
লক্ষণঃ
- এ রোগ ধানের কুশি অবস্থায় বেশি হয়।
- এ রোগ হলে পাতার খোল পঁচে বাদামি রং ধারণ করে। কান্ড নরম হয়ে পঁচে যায়।
- গাছে ধরে টান দিলে গাছ উঠে আসে এবং পঁচা শামুকের মত গন্ধ পাওয়া যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগ দেখা দিলে ক্ষেতের পানি শুকানো হলে রোগ ভাল হয়ে যায় ।
- প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত ধানের গোছা তুলে নতুন করে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পরে।
- প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক যেমন: কপার অক্সিক্লোরাইড (০.৪%) ১ মিলি/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা।
- আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না
- জমির পানি নিস্কাষনের ব্যবস্থা রাখুন।
- পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
- লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
১৩।রোগের নামঃ
ধানের চারার ব্লাইট রোগ Seedling Blight Disease of Rice
লক্ষণঃ
- ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
- চারা গজানোর সাথে সাথে মারা যায় অথবা চারা খুব দুর্বল ও লিকলিকে হয়।
- চারার গায়ে বিবর্ণ দাগ দেখা যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- এ রোগ দেখা দিলে বীজতলা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে বা প্লাবন সেচ দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
- বপনের আগে প্রতি কেজি বীজে ১ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন: ব্যাভিস্টিন বা নোইন মিশিয়ে বীজ শোধন করা।
- স্বল্প গভীরতায় বীজ বপন করা।
১৪।রোগের নামঃ
ধানের কান্ড পচা রোগ Stem Rot Disease (Sclerotium oryzae)
লক্ষণঃ
- এ রোগ সাধারণত কুশি গজানোর শেষ অবস্থায় মাঠে দেখা যায়।
- রোগের জীবাণু মাটিতেই বাস করে। সেচের পানি দ্বারা রোগের জীবাণু কান্ডে আক্রমণ করে।
- প্রথমে কুশির বহিঃ খোলে ছোট আয়তকার কালো কালো দাগ দেখা যায়। পরে এ দাগ ভিতরের খোলে ও কান্ডে প্রবেশ করে। কান্ড পচিয়ে দেয় বলে গাছ ঢলে পড়ে ফলে ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে পরে আবার পানি দেয়া।
- জমিতে ইউরিয়া কম ও বেশী পটাশ সার ব্যবহার করা।
- জমির নাড়া ও খড় ধান কাটার পর জমিতে পুড়ে ফেলা।
- প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক কুপ্রাভিট (০.৪%), কমপ্যানিয়ন (০.২%) ব্যবহার করা।
(তথ্য সূত্রেঃ plant disease clinic SAU)