মুগ ডালের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের প্রতিকার

Jul 04, 2023
কৃষি সম্পর্কিত
মুগ ডালের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের  প্রতিকার

মুগ ডালের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের  প্রতিকার 



১।রোগের নামঃ

মুগের পাতার মরিচা রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)

লক্ষণঃ

  • প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে।

  • পরবর্তীতে দাগ সমূহ মরিচার মত বাদামী বা কালচে রং এ পরিনত হয় ।

  • রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায় দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে সব পাতা ও কান্ডে দেখা দেয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

  • প্রতি কেজি মূগকালাইয়ের বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম নোইন মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

  • ফসলের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

  • বিলম্বে মূগ বপন করবেন না ।

  • প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন: আকোনাজল বা ক্রিজল ১ মি.লি. বা টিল্ট-২৫০ ইসি ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।

২।রোগের নামঃ

মুগের গোড়া পচা রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)

লক্ষণঃ

  • চারা ও বয়স্ক আবস্থায় এ রোগের আক্রমণ হয় ও বেশী আক্রমণে গাছ মারা যায়।

  • বয়স্ক গাছ হলুদ রং হয়।

  • আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।মাটির সংযোগস্থলে গোড়ায় পচন দেখা দেয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  •  আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।

  • পানি নিস্কাশণের ভাল ব্যবস্থা করা।

  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না ।

  • জমিতে কয়েকবার অন্য ফসল চাষ করে আবার মুগের চাষ করুন ।

  • অধিক পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করা।

  • জমি চাষ দিয়ে কিছু দিন ফেলে রাখা।

  • বপনের পূর্বে কেজি প্রতি ২.৫ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা কর্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করুন।

  • অধিক আক্রমণের ক্ষেত্রে রোভরাল ২ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে মাটিসহ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন।

৩।রোগের নামঃ

মুগের পাউডারী মিলডিউ রোগ Powdery Mildew of Mungbean (Oidium sp.) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • পাতা, কান্ড ও ফল আক্রান্ত হয়।

  • আক্রান্ত পাতা, কান্ড ও ফলে সাদা পাউডারের মত আবরণ পড়ে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আগাম বীজ বপন করা।

  • সুষম সার প্রয়োগ করা।

  • পরিমিত সেচ প্রদান।

  • রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যাবহার করা।

  • আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।

  • রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ১.২ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি বা থিয়োভিট ২ গ্রাম মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর  ‍স্প্রে করা।

৪।রোগের নামঃ

মুগের পাতার দাগ রোগ  Lea Spot of Mungbean (Cercospora cruenta & Cerocospora canescens) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • ফুল আসার সময় গাছের পাতয় এ রোগের আক্রমণ বেশী দেখা যায়।

  • প্রথমে পাতার উপর ছোট ছোট পানিতে ভেজা সূঁচের মাথার সমান আকারের দাগ দেখা যায়।

  • এই দাগগুলি বাদামী বা লালচে বাদামী রং ধারণ করে ক্রমশ আকারে বড় হতে থাকে।

  • একাধিক দাগ এক সাথে মিশে বড় দাগের সৃষ্টি করে।

  • ফসলের জাত ভেদে দাগগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে দেখা যায়। কোন কোন জাতের দাগগুলি চারিদিকে বাদামী রং বলয়যুক্ত এবং কেন্দ্রের কিছুটা অংশ সাদা হয়। আবার কোন কোন জাতে দাগের বেশির ভাগ অংশই সাদাটে হয়।

  • সাধারণত দাগগুলো প্রায় গোলাকার হয়।

  • খুব বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • পরিত্যক্ত ফসলের অংশ নষ্ট বা পুড়িয়ে ফেলা।

  • রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা যেমন, বারি মুগ- ২,৩,৪ ও ৫,৬।

  • এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে অটোস্টিন ৭০ ডব্লিউ পি এবং সিকিউর ৬০০ ডব্লিউ জি নামক ঔষধ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হারে মিশিয়ে (০.১%) ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ২ হতে ৩ বার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

৫।রোগের নামঃ

মুগের হলদে মোজাইক রোগ  (Yellow Mosaic of  Mungbean) ভাইরাসজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • ভাইরাসের আক্রমণে এই রোগ সৃষ্টি হয়। সাদা মাছি দ্বারা এই রোগের ভাইরাস বিস্তার লাভ করে।

  • আক্রান্ত পাতার উপর গাঢ় সবুজ এবং হলুদ রং এর মিশ্রণ যুক্ত ছোপ ছোপ মোজাইকের মতো দাগ এ রোগের প্রধান লক্ষণ।

  • জাত ভেদে এ রোগের লক্ষণের কিছুটা তারতম্য হলেও হলুদ হয়ে যাওয়া সর্বাবস্থায় দেখা যায়।

  • আক্রান্ত গাছ খর্বাকৃতির হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা, ফুল ও ফল কুকড়ে যায় এবং ফলের আকার ছোট হয়।

  • প্রতিটি ফলে বীজের সংখ্যা হ্রাস পায়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছে ফুল ও ফল মোটেই ধরে না বা খুবই কম ধরে থাকে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।

  • আক্রান্ত ক্ষেত হতে বীজ সংগ্রহ না করা।

  • আক্রান্ত গাছ ও বিকল্প পোষক সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা।

  • ভাইরাসের বাহক পোকা সাদা মাছি বালাইনাশক দ্বারা দমন করা। যেমনঃ ডায়মেথয়েট, এসাটাফ বা এডমায়ার বা টিডো ইত্যাদি।

  • আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে এডমায়ার ২০০ এমএল (ইমিডাক্লোপ্রিড) ০.২৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ফুল আসার পূর্বে স্প্রে করলে রোগের আক্রমণ কমে যায়।

  • বীজ বপনের ৫০ দিন পর নিম পাতার রস মুগের পাতায় স্প্রে করলে এ রোগের প্রকোপ কমে।

                                                                        (তথ্যসূত্রে- plant disease clinic BAU)


মুগ ডালে বিভিন্ন  পোকার আক্রমন ও তার প্রতিকার  : 

মুগের জমিতে বিছাপোকা ও শুটি ছিদ্রকারী পোকা দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডেসিস ২.৫ ইসি বা সিমবুস ১০ ইসি ১ মিলি/লি পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ বার স্প্রে করা যেতে পারে।


সমস্ত বিভাগ
ফ্ল্যাশ বিক্রয়
আজকের ডিল