আখের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

Jun 17, 2023
কৃষি সম্পর্কিত
আখের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

          আখের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

১।রোগের নামঃ

আখের খোল পঁচা রোগ

লক্ষণঃ

  • আখের নিচের পাতায় কালচে লাল থেকে লাল রঙ্গের দাগ দেখা যায়।

  • পরবর্তীতে পাতার নিচে পঁচন শুরু হয়। এবং টান দিলে উঠে আসে।

  • খোলের নিচে ছত্রাকের কাল গুটি গুটি অংশ দেখতে পাওয়া যায় ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

  • আগাম চাষ করা আগাম চাষ অনুসরণ করা ।

  • আখ কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ ঐ জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।

  • রোগাক্রান্ত জমিতে মুড়ি ইক্ষুর চাষ বন্ধ করতে হবে

  • রোগাক্রান্ত গাছ থেকে আক্রান্ত পাতা ও খোল আপসারণ করে মাটিতে পুতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।

  • জমিতে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা নিতে হবে ।


২।রোগের নামঃ

আখের আংটি দাগ রোগ

লক্ষণঃ

  • এটি ছত্রাকজনিত রোগ ।

  • এ রোগ হলে আখের পাতায় অসংখ্য দাগ দেখা দেয়।

  • দাগের মাঝখানটা খড়ের ন্যায় কিন্তু কিনারা বাদামি রংয়ের হয়।


সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

  • রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে ।

  • আখ কাটার পর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।

  • রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে পুড়িয়ে ফেলা ।

  • কপারঅক্সিক্লোরাইড ১ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।


৩।রোগের নামঃ

আখের মোজাইক রোগ

লক্ষণঃ

  • গাঢ় সবুজ রং এর পাতা মধ্যে হালকা হালকা ফ্যাকাশে বা হলুদে রং এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছোট ছোট টানা টানা দাগই এ রোগের প্রধান লক্ষণ ।

  • তবে ইহা পাতা লম্বলম্বি দিকে সমস্ত পাতা জুড়ে সমভাবে বিস্তৃত থাকে ।

  • পুরানো পাতার চেয়ে কচি পাতায় এ রোগের লক্ষণ অধিক পরিস্কার বোঝা যায় এবং কান্ডের উপরিভাগে ছোট ছোট চিঁর ধরে ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগাক্রান্ত জমিতে মুড়ি ইক্ষুর চাষ বন্ধ করতে হবে।

  • রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

  • রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে ।

  • জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে ।

  • জমিতে সুষম সার ব্যবহার


৪।রোগের নামঃ

আখের চক্ষু দাগ রোগ

লক্ষণঃ

  • এটি ছত্রাকজনিত রোগ ।

  • এ রোগ হলে আখের পাতায় লম্বাটে লালচে বা বাদামী দাগ দেখা দেয়।

  • দাগের মাঝখানটা লালচে বা বাদামী কিন্তু কিনারা খড়ের ন্যায় রঙ্গের হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

  • রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে।

  • আখ কাটার পর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।

  • আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে পুড়িয়ে ফেলা।

  • কপারঅক্সিক্লোরাইড ১ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।


৫।রোগের নামঃ

আখের সাদা পাতা রোগ

লক্ষণঃ

  • আক্রান্ত গাছের পাতা সাদা হয়ে যায় ।

  • অনেক সময় অঙ্কুরোদগম এর পরেই কচি পাতা সাদা রং ধারন করে ।

  • আক্রান্ত গাছের কুশি হয় বয়স্ক গাছের ডগার মধ্যস্থ পাতাও সাদা হয় ।

  • আক্রান্ত গাছের গড়ন খর্বাকৃতির হয় ।

  • ঝাড়-বৃদ্ধি খুব কম এবং অধিক কুশি হয় ।

  • বয়স্ক ইক্ষুর চোখ গুলো ফুটে যায় এবং সম্পূর্ণ সাদা বা সবুজ সাদা মিশ্রিত পার্শ্ব কুশিবের হয় ।

  • ইক্ষুর ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায় ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত ইক্ষুর ঝাড় থেকে বীজ ব্যবহার করা যাবে না ।

  • আগাম আখ চাষ করুন ।

  • উন্নত জাতের আখ বপন করুন ।

  • সুস্থ সবল রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ।

  • ৫৪ সেঃ তাপমাত্রায় আর্দ্র গরম বাতাসে বীজ ৪ ঘন্টাকাল শোধণ করে রোপণ করতে হবে ।

  • রোগাক্রান্ত ইক্ষুর ঝাড় শিকড়সহ তুলে ফেলতে হবে ।

৬।রোগের নামঃ

আখের কালো শীষ রোগ

লক্ষণঃ

  • ইক্ষুর বয়স ৩/৪ মাস থেকেই এ রোগ দেখা দেয় ।

  • আক্রান্ত গাছের মাথা কাল চাবুকের মত কয়েক ফুট লম্বা একটা শীষ বের হয় ।

  • আক্রান্ত গাছ সাধারণতঃ খর্বাকৃতির হয়ে থাকে ।

  • কান্ড পেন্সিলের মত চিকন ও শক্ত হয় এবং বাড়তে পারে না ।

  • আক্রান্ত গাছের পাতাগুলো সরু, খাট ও খাড়া হয় এবং হালকা সবুজ র্ং ধারণ করে ।

  • সাধারণতঃ মুড়ি ইক্ষুতে এ রোগের আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয় ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগাক্রান্ত জমিতে মুড়ি ইক্ষুর চাষ বন্ধ করতে হবে ।

  • রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে ।

  • আগাম চাষ করা আগাম চাষ অনুসরণ করা ।

  • আক্রান্ত গাছের ঝড় শিকড় সমেত তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।


৭।রোগের নামঃ

আখের সুটিমোল্ড রোগ

লক্ষণঃ

  • এ রোগের আক্রমনে পাতায় , ফলে ও কান্ডে কাল ময়লা জমে।

  • মিলিবাগ বা সাদা মাছির আক্রমন এ রোগ ডেকে আনে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • একই জমিতে পরপর আখ চাষ করবেন না ।

  • গভীরভাবে জমি চাষ করুন

  • আগাম চাষ করা আগাম চাষ অনুসরণ করা ।

  • আকান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।

  • টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা।


৮।রোগের নামঃ

আখের বীজ পঁচা রোগ Seed Rot of Sugarcane

লক্ষণঃ

  • জমিতে আখ রোপনের পর তা গজায়না বরং পঁচে যায়।

  • গজালেও তা টিকেনা চারা মরে যায়।

  • রোপন করা আখ কাটলে আনারসের মত গন্ধ পাওয়া যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • অনুমোদিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের চাষ করতে হবে ।

  • জমিতে যথাযথ পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ।

  • বীজ তলায় চারা তৈরী করে চারা মূল জমিতে রোপন করুন।

  • আক্রান্ত গাছ জমি থেকে শিকড় সমেত তুলে ফেলুন।

  • রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • অতি ভেজা বা অতি শুকনা জমিতে ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় আখ রোপন করবেন না।

  • প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা নোইন নামক ছত্রাক নাশক মিশিয়ে রোপনের আগে ৩০ মিনিট ধরে বীজ শোধন করে নিন।


৯।রোগের নামঃ

আখের উইল্ট রোগ Wilt of Sugarcane.

লক্ষণঃ

  • ইক্ষু্র বয়স যখন ৮-৯মাস হলে এ রোগের আক্রমণ দেখা যায় ।

  • আক্রান্তর গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং উপর থেকে শুকাতে থাকে ।

  • আক্রান্ত ইক্ষু লম্বালম্বিভাবে চিড়লে কান্ডের মধ্যভাগে গিরার নিকটে গাঢ় লাল রং দেখা যায় ।

  • লাল পচা রোগের মতই উইল্ট রোগে আক্রান্ত আখের গিটের অংশে ইটের ন্যায় লাল হয় কিন্তু এক্ষেত্রে ছোপ সাদা আড়াআড়ি দাগ দেখা যায় না ।

  • রোগের প্রকোপ বেশী হলে আক্রান্ত ইক্ষুর ভিতরে ফাঁপা হয় এবং কান্ড শুকিয়ে যায় ।

  • খুব অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত জমির ইক্ষু শুকিয়ে যায় ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ জমি থেকে শিকড় সমেত তুলে ফেলুন।

  • রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • আক্রান্ত জমিতে পরবর্তীতে ইক্ষু চাষ না করে অন্য ফসলের আবাদ করুন ।

  • রোগাক্রান্ত জমিতে ইক্ষুর মুড়ি চাষ করা যাবে না ।

  • অনুমোদিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের চাষ করতে হবে ।

  • জমিতে যথাযথ উর্বরতা এবং রস সংরক্ষণ করতে হবে ।

  • ইক্ষু কাটার পর মোথাসমেত সমস্ত মরা মাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে ও প্রখর রোদ্র দ্বারা আক্রান্ত জমির মাটি শুকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে ।

  • প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা নোইন নামক ছত্রাক নাশক মিশিয়ে রোপনের আগে ৩০ মিনিট ধরে বীজ শোধন করে নিন ।

১০।রোগের নামঃ

আখের পাতার লাল ডোরা দাগ/ডগা পচা রোগ Red Stripe of Top Rot Disease of Sugarcane (Pseudomonas sp.) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • আখের পাতার শিরা বরাবর লম্বা, সরু, লাল বা গাঢ় লাল রঙের টানাটানা দাগ দেখা যায়।

  • প্রথমে দাগগুলো আলাদা আলাদা থাকে। পরে একত্র হয়ে বিস্তৃত হয় ও পাতার অনেকাংশ জুড়ে দেখা যায়।

  • পাতার ঠিক নিচের কচি বাড়ন্ত কান্ডে পচন ধরে, এত ডগার পাতা মরে যায় ও ডগার অংশ ভেঙ্গে পড়ে।

  • আক্রান্ত ডগা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।

  • রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা।

  • রোগাক্রান্ত গাছ পুড়ে নষ্ট করা।


১১।রোগের নামঃ

আখের লাল পচা রোগ Red Rot of Sugarcane (Colletotrichum falcatum) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • আক্রান্ত আখ লম্বালম্বি ভাবে চিড়লে লাল রঙের মাঝে আড়াআড়ি সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।

  • আখের কান্ড পচে যায়।

  • পাতা হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়।

  • আখের কান্ড শুকিয়ে মাঝখানে ফাপা হয়, আখ মারা যায়।

  • আক্রান্ত আখ হতে মদ বা তাড়ির মতো দুর্গন্ধ বের হয়।

  • কচি কুশিতে আক্রমন হলে কুশির মড়ক দেখা যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • অনুমোদিত ও রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা।

  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।

  • রোগাক্রান্ত ক্ষেত হতে বীজ সংগ্রহ না করা।

  • মুড়ি আখের চাষ না করা।

  • আখের জমিতে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা করা।

  • বীজ বপনের পূর্বে ব্যাভিষ্টিন নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করা ( ৪১ ভাগ ব্যাভিষ্টিন এবং ১০০০ ভাগ পানি)

  • ফসল কাটার পর ক্ষেতের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা।



১২।রোগের নামঃ

আখের পাতার লাল দাগ রোগ

লক্ষণঃ

  • এটি ছত্রাকজনিত রোগ ।

  • এ রোগ হলে আখের পাতায় মাঝে মাঝে রক্তের ফোটার ন্যায় লাল দাগ দেখা দেয়।

  • দাগের মাঝখানটা কালো হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

  • রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে ।

  • নিচের দিকের আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে পুড়িয়ে ফেলা ।

  • কপারঅক্সিক্লোরাইড ১ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।

                                                                                (তথ্যসূত্রে- plant disease clinic BAU)





সমস্ত বিভাগ
ফ্ল্যাশ বিক্রয়
আজকের ডিল