আখের খোল পঁচা রোগ
লক্ষণঃ
আখের নিচের পাতায় কালচে লাল থেকে লাল রঙ্গের দাগ দেখা যায়।
পরবর্তীতে পাতার নিচে পঁচন শুরু হয়। এবং টান দিলে উঠে আসে।
খোলের নিচে ছত্রাকের কাল গুটি গুটি অংশ দেখতে পাওয়া যায় ।
রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
আগাম চাষ করা আগাম চাষ অনুসরণ করা ।
আখ কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ ঐ জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
রোগাক্রান্ত জমিতে মুড়ি ইক্ষুর চাষ বন্ধ করতে হবে
রোগাক্রান্ত গাছ থেকে আক্রান্ত পাতা ও খোল আপসারণ করে মাটিতে পুতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
জমিতে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা নিতে হবে ।
আখের আংটি দাগ রোগ
এটি ছত্রাকজনিত রোগ ।
এ রোগ হলে আখের পাতায় অসংখ্য দাগ দেখা দেয়।
দাগের মাঝখানটা খড়ের ন্যায় কিন্তু কিনারা বাদামি রংয়ের হয়।
রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে ।
আখ কাটার পর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।
রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে পুড়িয়ে ফেলা ।
কপারঅক্সিক্লোরাইড ১ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
আখের মোজাইক রোগ
গাঢ় সবুজ রং এর পাতা মধ্যে হালকা হালকা ফ্যাকাশে বা হলুদে রং এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছোট ছোট টানা টানা দাগই এ রোগের প্রধান লক্ষণ ।
তবে ইহা পাতা লম্বলম্বি দিকে সমস্ত পাতা জুড়ে সমভাবে বিস্তৃত থাকে ।
পুরানো পাতার চেয়ে কচি পাতায় এ রোগের লক্ষণ অধিক পরিস্কার বোঝা যায় এবং কান্ডের উপরিভাগে ছোট ছোট চিঁর ধরে ।
রোগাক্রান্ত জমিতে মুড়ি ইক্ষুর চাষ বন্ধ করতে হবে।
রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে ।
জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে ।
জমিতে সুষম সার ব্যবহার
আখের চক্ষু দাগ রোগ
এটি ছত্রাকজনিত রোগ ।
এ রোগ হলে আখের পাতায় লম্বাটে লালচে বা বাদামী দাগ দেখা দেয়।
দাগের মাঝখানটা লালচে বা বাদামী কিন্তু কিনারা খড়ের ন্যায় রঙ্গের হয়।
রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে।
আখ কাটার পর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।
আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে পুড়িয়ে ফেলা।
কপারঅক্সিক্লোরাইড ১ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
আখের সাদা পাতা রোগ
আক্রান্ত গাছের পাতা সাদা হয়ে যায় ।
অনেক সময় অঙ্কুরোদগম এর পরেই কচি পাতা সাদা রং ধারন করে ।
আক্রান্ত গাছের কুশি হয় বয়স্ক গাছের ডগার মধ্যস্থ পাতাও সাদা হয় ।
আক্রান্ত গাছের গড়ন খর্বাকৃতির হয় ।
ঝাড়-বৃদ্ধি খুব কম এবং অধিক কুশি হয় ।
বয়স্ক ইক্ষুর চোখ গুলো ফুটে যায় এবং সম্পূর্ণ সাদা বা সবুজ সাদা মিশ্রিত পার্শ্ব কুশিবের হয় ।
ইক্ষুর ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায় ।
আক্রান্ত ইক্ষুর ঝাড় থেকে বীজ ব্যবহার করা যাবে না ।
আগাম আখ চাষ করুন ।
উন্নত জাতের আখ বপন করুন ।
সুস্থ সবল রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ।
৫৪ সেঃ তাপমাত্রায় আর্দ্র গরম বাতাসে বীজ ৪ ঘন্টাকাল শোধণ করে রোপণ করতে হবে ।
রোগাক্রান্ত ইক্ষুর ঝাড় শিকড়সহ তুলে ফেলতে হবে ।
আখের কালো শীষ রোগ
ইক্ষুর বয়স ৩/৪ মাস থেকেই এ রোগ দেখা দেয় ।
আক্রান্ত গাছের মাথা কাল চাবুকের মত কয়েক ফুট লম্বা একটা শীষ বের হয় ।
আক্রান্ত গাছ সাধারণতঃ খর্বাকৃতির হয়ে থাকে ।
কান্ড পেন্সিলের মত চিকন ও শক্ত হয় এবং বাড়তে পারে না ।
আক্রান্ত গাছের পাতাগুলো সরু, খাট ও খাড়া হয় এবং হালকা সবুজ র্ং ধারণ করে ।
সাধারণতঃ মুড়ি ইক্ষুতে এ রোগের আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয় ।
রোগাক্রান্ত জমিতে মুড়ি ইক্ষুর চাষ বন্ধ করতে হবে ।
রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে ।
আগাম চাষ করা আগাম চাষ অনুসরণ করা ।
আক্রান্ত গাছের ঝড় শিকড় সমেত তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
আখের সুটিমোল্ড রোগ
এ রোগের আক্রমনে পাতায় , ফলে ও কান্ডে কাল ময়লা জমে।
মিলিবাগ বা সাদা মাছির আক্রমন এ রোগ ডেকে আনে।
একই জমিতে পরপর আখ চাষ করবেন না ।
গভীরভাবে জমি চাষ করুন
আগাম চাষ করা আগাম চাষ অনুসরণ করা ।
আকান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা।
আখের বীজ পঁচা রোগ Seed Rot of Sugarcane
জমিতে আখ রোপনের পর তা গজায়না বরং পঁচে যায়।
গজালেও তা টিকেনা চারা মরে যায়।
রোপন করা আখ কাটলে আনারসের মত গন্ধ পাওয়া যায়।
অনুমোদিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের চাষ করতে হবে ।
জমিতে যথাযথ পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
বীজ তলায় চারা তৈরী করে চারা মূল জমিতে রোপন করুন।
আক্রান্ত গাছ জমি থেকে শিকড় সমেত তুলে ফেলুন।
রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
অতি ভেজা বা অতি শুকনা জমিতে ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় আখ রোপন করবেন না।
প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা নোইন নামক ছত্রাক নাশক মিশিয়ে রোপনের আগে ৩০ মিনিট ধরে বীজ শোধন করে নিন।
আখের উইল্ট রোগ Wilt of Sugarcane.
ইক্ষু্র বয়স যখন ৮-৯মাস হলে এ রোগের আক্রমণ দেখা যায় ।
আক্রান্তর গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং উপর থেকে শুকাতে থাকে ।
আক্রান্ত ইক্ষু লম্বালম্বিভাবে চিড়লে কান্ডের মধ্যভাগে গিরার নিকটে গাঢ় লাল রং দেখা যায় ।
লাল পচা রোগের মতই উইল্ট রোগে আক্রান্ত আখের গিটের অংশে ইটের ন্যায় লাল হয় কিন্তু এক্ষেত্রে ছোপ সাদা আড়াআড়ি দাগ দেখা যায় না ।
রোগের প্রকোপ বেশী হলে আক্রান্ত ইক্ষুর ভিতরে ফাঁপা হয় এবং কান্ড শুকিয়ে যায় ।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত জমির ইক্ষু শুকিয়ে যায় ।
আক্রান্ত গাছ জমি থেকে শিকড় সমেত তুলে ফেলুন।
রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
আক্রান্ত জমিতে পরবর্তীতে ইক্ষু চাষ না করে অন্য ফসলের আবাদ করুন ।
রোগাক্রান্ত জমিতে ইক্ষুর মুড়ি চাষ করা যাবে না ।
অনুমোদিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের চাষ করতে হবে ।
জমিতে যথাযথ উর্বরতা এবং রস সংরক্ষণ করতে হবে ।
ইক্ষু কাটার পর মোথাসমেত সমস্ত মরা মাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে ও প্রখর রোদ্র দ্বারা আক্রান্ত জমির মাটি শুকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে ।
প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা নোইন নামক ছত্রাক নাশক মিশিয়ে রোপনের আগে ৩০ মিনিট ধরে বীজ শোধন করে নিন ।
১০।রোগের নামঃ
আখের পাতার লাল ডোরা দাগ/ডগা পচা রোগ Red Stripe of Top Rot Disease of Sugarcane (Pseudomonas sp.) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।
আখের পাতার শিরা বরাবর লম্বা, সরু, লাল বা গাঢ় লাল রঙের টানাটানা দাগ দেখা যায়।
প্রথমে দাগগুলো আলাদা আলাদা থাকে। পরে একত্র হয়ে বিস্তৃত হয় ও পাতার অনেকাংশ জুড়ে দেখা যায়।
পাতার ঠিক নিচের কচি বাড়ন্ত কান্ডে পচন ধরে, এত ডগার পাতা মরে যায় ও ডগার অংশ ভেঙ্গে পড়ে।
আক্রান্ত ডগা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
রোগাক্রান্ত গাছ পুড়ে নষ্ট করা।
আখের লাল পচা রোগ Red Rot of Sugarcane (Colletotrichum falcatum) ছত্রাকজনিত রোগ।
আক্রান্ত আখ লম্বালম্বি ভাবে চিড়লে লাল রঙের মাঝে আড়াআড়ি সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।
আখের কান্ড পচে যায়।
পাতা হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়।
আখের কান্ড শুকিয়ে মাঝখানে ফাপা হয়, আখ মারা যায়।
আক্রান্ত আখ হতে মদ বা তাড়ির মতো দুর্গন্ধ বের হয়।
কচি কুশিতে আক্রমন হলে কুশির মড়ক দেখা যায়।
অনুমোদিত ও রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা।
রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
রোগাক্রান্ত ক্ষেত হতে বীজ সংগ্রহ না করা।
মুড়ি আখের চাষ না করা।
আখের জমিতে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা করা।
বীজ বপনের পূর্বে ব্যাভিষ্টিন নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করা ( ৪১ ভাগ ব্যাভিষ্টিন এবং ১০০০ ভাগ পানি)
ফসল কাটার পর ক্ষেতের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা।
আখের পাতার লাল দাগ রোগ
এটি ছত্রাকজনিত রোগ ।
এ রোগ হলে আখের পাতায় মাঝে মাঝে রক্তের ফোটার ন্যায় লাল দাগ দেখা দেয়।
দাগের মাঝখানটা কালো হয়।
রোগাক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
রোগমুক্ত আনূমোদিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করতে হবে ।
নিচের দিকের আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে পুড়িয়ে ফেলা ।
কপারঅক্সিক্লোরাইড ১ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
(তথ্যসূত্রে- plant disease clinic BAU)