ইক্ষু বা আখের পরিচয় এবং এর বিভিন্ন জাতের বৈশিষ্ট্য
আখ:
আখ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল৷ পাট ও তামাকের মতো আখও চাষীদেরকে নগদ অর্থে আজকাল পাট চাষের চেয়ে আখ চাষ অধিক লাভজনক বলে চাষীরা পাটের চেয়ে আখ চাষেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই কিছু না কিছু আখের চাষ হয়, তবে জলবায়ুর প্রভাব অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো আখ চাষের জন্য উপযোগী৷
ইক্ষু জাত উদ্ভাবন :
এ সময় ৬টি উচ্চফলনশীল ও অধিক চিনিযুক্ত ইক্ষু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন- ঈশ্বরদী ৩৯, ঈশ্বরদী ৪০, বিএসআরআই আখ ৪১, বিএসআরআই আখ ৪২, বিএসআরআই আখ ৪৩ এবং বিএসআরআই আখ ৪৪। এ জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১০০ টনেরও বেশি এবং চিনি আহরণের হার ১২ শতাংশ এর ঊর্ধ্বে। এ জাতগুলো বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় বিশেষ করে লবণাক্ত এলাকায়ও চাষাবাদ উপযোগী। এছাড়া বিএসআরআই আখ ৪১ জাতটি চিনি ছাড়াও গুড়, রস তৈরি এবং চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বিশেষ উপযোগী। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১৫০ টনেরও বেশি। বিএসআরআই আখ ৪২ জাতটিও চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী এবং আকর্ষণীয়।
সুগারবিটের জাত নির্বাচন :
বাংলাদেশের প্রধান চিনি উৎপাদানকারী ফসল আখ থেকে উৎপাদিত চিনি ও গুড়ের পরিমাণ দেশজ মোট চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত হওয়ায় তা পূরণের লক্ষ্যে ইক্ষুর পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি ট্রপিক্যাল সুগারবিটের চাষাবাদ প্রবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশে চাষাবাদ উপযোগী ট্রপিক্যাল সুগারবিটের ৯টি জাত যথা- শুভ্রা, কাভেরী, এইচ আই-০০৪৪, এইচ আই-০৪৭৩, সিএস-০৩২৭, সিএস-০৩২৮, এসজেড-৩৫, পিএসি-৬০০০৮ এবং এসভি-১ প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করা হয়েছে যা বাণিজ্যিকভাবে সুগারবিট চাষের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি থেকে আরও কিছু ট্রপিক্যাল সুগারবিটের জাত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং জাতগুলো নিয়ে গবেষণা-মূল্যায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
কিছু জাতের বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলঃ
আইএসডি ২৮:
এই জাতটি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় এবং উচ্চ ফলন সম্ভাবনার জন্য পরিচিত। এটিতে ভাল চিনির পরিমাণ সহ পুরু ডালপালা রয়েছে। আইএসডি ২৮ মাটির বিভিন্ন অবস্থার সাথে অভিযোজনযোগ্যতা এবং প্রধান রোগ এবং কীটপতঙ্গের প্রতিরোধের জন্য অনুকূল।
আইএসডি ৩৩:
Isd 33 হল বাংলাদেশে আরেকটি জনপ্রিয় জাত, এটির উচ্চ চিনি পুনরুদ্ধার এবং ভাল মিলিং বৈশিষ্ট্যের জন্য মূল্যবান। এটিতে ভাল ফাইবার সামগ্রী সহ মাঝারি আকারের ডালপালা রয়েছে। আইএসডি ৩৩ বিভিন্ন কৃষি-জলবায়ু অবস্থার সাথে অভিযোজনযোগ্যতা এবং নির্দিষ্ট রোগের প্রতিরোধের জন্য পরিচিত।
আইএসডি ৩৫:
এই জাতটি এর উচ্চ চিনির উপাদান এবং ভাল রেটুনিং ক্ষমতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। রেটুনিং বলতে বোঝায় আখ কাটার পর খড় থেকে নতুন অঙ্কুর তৈরি করার ক্ষমতা।আইএসডি ৩৫ এর মাঝারি আকারের ডালপালা রয়েছে এবং বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে এর ফলন স্থিতিশীলতার জন্য পছন্দ করা হয়।
আইএসডি ৩৭:
আইএসডি ৪০ বাংলাদেশে একটি ব্যাপকভাবে চাষ করা আখের জাত, যা উচ্চ চিনির উপাদান, ভাল আখের গুণমান এবং চমৎকার মিলিং বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটির মাঝারি আকারের ডালপালা রয়েছে এবং বিভিন্ন কৃষি-জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে ভাল অভিযোজন ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
আইএসডি ৪০:
এই জাতটি এর উচ্চ চিনির উপাদান এবং ভাল রেটুনিং ক্ষমতার জন্য অনুকূল। এটিতে ভাল ফাইবার সামগ্রী সহ মাঝারি আকারের ডালপালা রয়েছে। আইএসডি ৪০ বেলে এবং এঁটেল মাটি উভয় অবস্থায়ই ভাল কাজ করে এবং কিছু রোগের প্রতিরোধ দেখায়।
এগুলি বাংলাদেশে চাষকৃত আখের জাতের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে চলমান গবেষণা এবং প্রজনন প্রোগ্রামগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ফলনের সম্ভাবনা এবং চিনির পরিমাণের মতো বর্ধিত বৈশিষ্ট্য সহ নতুন এবং উন্নত জাত প্রবর্তন করতে পারে। বাংলাদেশের কৃষকরা প্রায়শই তাদের নির্দিষ্ট কৃষি-জলবায়ু পরিস্থিতি এবং চাষাবাদের উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত জাত বেছে নেয়।