বাংলাদেশের কৃষিতে মৌসুমি পরিবর্তন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্ষা শেষে যখন শরৎকাল আসে, তখন থেকেই কৃষকেরা শীতকালীন সবজির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এই সময়টা সবজি চাষের জন্য সেরা, বিশেষ করে বীজতলা তৈরির জন্য।
আর্দ্রতা উপযুক্ত – বর্ষার বৃষ্টির কারণে মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত – গরম যেমন কমে, আবার প্রচণ্ড শীতও পড়ে না। এই মাঝামাঝি আবহাওয়া সবজির চারা বৃদ্ধির জন্য আদর্শ।
রোগবালাই তুলনামূলক কম – অতিরিক্ত বর্ষা বা শীতের কারণে যেমন রোগ ছড়ায়, এই সময়ে ঝুঁকি কম থাকে।
বাজার সুবিধা – সময়মতো সবজি বীজতলা করলে মৌসুমের শুরুতেই সবজি বাজারে আনা যায়। এতে দামও বেশি পাওয়া যায়।
শীতকালীন জনপ্রিয় সবজির বেশিরভাগের বীজতলা শরৎকালেই করতে হয়। যেমন:
বাঁধাকপি
ফুলকপি
টমেটো
মরিচ
বেগুন
শসা, লাউ, করলা
এই সবজিগুলো সময়মতো বপন করলে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব হয়।
উঁচু ও উর্বর জমি বেছে নিন যাতে পানি জমে না থাকে।
ভিজে জমিতে বীজতলা করলে চারাগুলো সহজে পচে যায়।
মাটি ভালোভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করতে হবে।
প্রতি শতকে অন্তত ৫–৭ কেজি ভালো পচা গোবর সার মেশাতে হবে।
চাইলে কিছুটা রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি)ও মিশিয়ে দেওয়া যায়, তবে পরিমিত মাত্রায়।
বীজতলায় সারি করে বীজ ফেলতে হবে।
টমেটো/বেগুন/মরিচের বীজ ১–১.৫ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করা ভালো।
বীজ বপনের পর পাতলা মাটি বা শুকনা খড় দিয়ে ঢেকে দিন।
বীজতলা সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে রাখতে হবে।
অতিরিক্ত পানি যেন জমে না থাকে, সেজন্য পাশে ছোট নালা রাখতে হবে।
সরাসরি রোদে বীজ শুকিয়ে যেতে পারে, তাই বাঁশ বা খড় দিয়ে ছাউনি বানানো ভালো।
ভারী বৃষ্টির সময় ছাউনি বীজতলাকে রক্ষা করবে।
বীজ বপনের আগে বীজ শোধন (ফাঙ্গিসাইড দিয়ে) করা জরুরি।
চারা ওঠার পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
কীটপতঙ্গ দেখা দিলে জৈব বা অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
বীজ বপনের প্রায় ২৫–৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপণের উপযুক্ত হয়।
চারা তোলার সময় শিকড়ের মাটি যেন না ভাঙে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোপণের আগে চারা গোড়ায় হালকা পানি দেওয়া ভালো।
এখনকার সময়টাই সবজি বীজতলা করার আদর্শ সময়। সঠিক জমি, ভালো বীজ, সার, পানি ও পরিচর্যা দিলে ফলন হবে ভালো এবং সময়মতো বাজারে সবজি বিক্রি করা যাবে। এতে শুধু কৃষকের আয় বাড়বে না, দেশের সবজি উৎপাদনেও অবদান রাখা যাবে।