ক্যাপসিকাম চাষ

Jul 06, 2023
চাষাবাদ
ক্যাপসিকাম চাষ

ক্যাপসিকাম চাষ


ভূমিকা:

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ করে থাকের, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানীর সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টম্যাটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ।


মিষ্টি মরিচের পুষ্টিমান ও ব্যবহার:

পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ’সি’ থাকার কারণে এবং অতি সহজেই টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

জাত

আমাদের দেশে আবাদকৃত জাতগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে–California Wonder, Tender Bell (F1)এবং Yolow Wonder ইত্যাদি । প্রতি বছর এগুলোর বীজ আমদানি করতে হয়। তবে আমাদের দেশে California Wonder এর বীজ উৎপাদন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।আমাদের দেশেও দুইটি জাত উদ্ভবন করেছে।

বারি মিষ্টি মরিচ ১

বৈশিষ্ট্য :

১। ৭-৯ টি ফল/গাছ পাওয়া যায়

২। গড় ফলের ওজন ৭৫-৮৫ গ্রাম

৩। উজ্জ্বল সবুজ বেল আকৃতির ফল পাকলে লাল রং ধারন করে।

উপযোগী এলাকা  : সারা দেশে চাষ উপযোগী

বপনের সময়  : অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস

মাড়াইয়ের সময়:  চারা লাগানোর ৬৫-৭৫ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফল ধারনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে

ফলন: ১৪-১৫ টন/হেক্টর

 বারি মিষ্টি মরিচ ২

বৈশিষ্ট্য :

  1. এটি ৮০-৯০ গ্রাম ওজনের বড়

  2. আকর্ষনীয় Bell shaped ফল।

  3. চকচকে সবুজ ফল, পাকলে হলুদ বর্ণ ধারন করে।

  4. গাছ প্রতি ১২-১৩টি ফল পাওয়া যায়।

  5. হেক্টর প্রতি ফলন ২৫-৩০ টন

  6. জীবন কাল: ১২৫-১৩৫ দিন।

উপযোগী এলাকা  : সারা দেশে চাষ উপযোগী

বপনের সময়  : অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস

মাড়াইয়ের সময়:  চারা লাগানোর ৬৫-৭৫ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।


চাষের সময়

বীজ বপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। তবে বর্তমানে ঘরোয়া কৃষকরা ১২ মাসই এটি চাষের চেষ্টা করছেন। ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬০-২৫০সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬০- ২১০সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না।

মাটি

মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি ভালো। মিষ্টি মরিচ খরা ও গোড়ায় পানি জমা কোনটিই সহ্য করতে পারে না।

বেড তৈরি

বীজ বপণের ৭-১০ দিন পর চারার ৩-৪ পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হবে। এরপর মূল জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। এরপর বেড তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি বেড চওড়া ২.৫ ফুট রাখতে হয়। দুই বেডের মাঝখানে নালা রাখতে হবে। সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা তৈরি করা বেডে ১.৫ ফুট দূরে দূরে লাইনে রোপণ করা হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা বেশি থাকে।

সার

প্রতি শতক জমির জন্য গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমওপি ১ কেজি, দস্তা ২০ গ্রাম এবং জিপসাম ৪৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। এরমধ্যে অর্ধেক গোবর সার জমি তৈরির সময়, বাকি অর্ধেক গোবর সম্পূর্ণ টিএসপি, দস্তা, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমওপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমওপি পরবর্তীতে দুইভাগ করে চারা রোপণের ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ

ক্যাপসিকাম খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে সেচ দিতে হবে। কোনো গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে, যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

গাছের পরিচর্যা

টবের ক্ষেত্রে অঙ্কুরোদগমের আগে গাছটি যেন কম সূর্যালোকে থাকে, এই সময়ে আপনি সেটিকে বাড়ির ভিতরে রাখতে পারেন। অঙ্কুরোদগম হওয়ার পরে, আপনি টবটিকে বারান্দায় সূর্যালোকে রাখতে পারেন। 

তবে এই গাছটি প্রখর সূর্যের আলো যেন না পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। যে টবে বা পাত্রে আপনি এই গাছটি রোপণ করেছেন, তার মাটিতে যেন ভাল পরিমাণে আর্দ্রতা বজায় থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। চারা পড়ন্ত বিকেলে রোপণ করা উত্তম । চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে।ক্যাপসিকামের গাছ বৃদ্ধি পেতে প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে।
আর জমিতে চাষ করলে মনে রাখতে হবে মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধাতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সে. মি. হতে হবে এবং লম্বায় দুটি সারিতে ২০টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে। দু’টি সারির মাঝখানে ৩০ সে. মি. ড্রেন করতে হবে। জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কোনো জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।



সমস্ত বিভাগ
ফ্ল্যাশ বিক্রয়
আজকের ডিল