বেগুনের পরিচিতি ও বিভিন্ন জাত

Jul 04, 2023
চাষাবাদ
বেগুনের পরিচিতি ও বিভিন্ন জাত

বেগুনের পরিচিতি ও বিভিন্ন জাত 



আমাদের দেশের প্রায় সব জেলাতেই  কমবেশি বেগুনের চাষ করা হয়ে থাকে। আমাদের অনেকেরই বেগুন চাষ পদ্ধতি অজানা। সারা বছরই বেগুন চাষ করা হয়। বেগুনের গাছ প্রায় ৪০ থেকে ১৫০ সেমি লম্বা হয়। আমরা বেগুন সবজি হিসাবে খেয়ে থাকি, বেগুন পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। সঠিক নিয়মে চাষ না করার কারণে অনেক চাষীগণ লোকসান করে থাকেন।

বেগুনের জাত সমুহ

আমাদের দেশে সারা বছর বেগুন চাষ করা হলেও সব জাতগুলো সব সময় চাষ করা যায় না। দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে স্থানীয় ফসল হিসাবে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করা হয়। ভাল ফলন পেতে হলে ভাল মানের জাত র্নিবাচন করা দরকার। মৌসুম ভিত্তিতে সব জাত গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যেমন– শীতকালীন জাত ও বারমাসী জাত। শীতকালীন জাতের বেগুন কেবল মাত্র রবি মৌসুমেই চাষ করা হয়ে থাকে কারণ এ জাতের বেগুন শুধু মাত্র রবি মৌসুমেই ফল দিয়ে থাকে। আর বারমাসী জাতের বেগুন সারা বছরই চাষ করা যায়।

আমাদের দেশের স্থানীয় জাতগুলো হলো: ইসলামপুরী, উত্তরা, লাফফা, নয়নকাজল, মাকড়া, রাখাইন বেগুন, ঈশ্বরদি ১, খটখটিয়া, সাহেব বেগুন, তাল বা তল্লা বেগুন, কেজি বেগুন ইত্যাদি জাত।

হাইব্রিড জাতগুলো হলোঃ চমক এফ১, বিটি বেগুন,বিজয়, পার্পল কিং, কাজলা (বারি বেগুন ৪), নয়নতারা (বারি বেগুন ৫), তারাপুরী (বারি বেগুন ২), শুকতারা, ডিম বেগুন, মুক্তকেশী ইত্যাদি জাত সমুহ।

নিচে কিছু জাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলঃ 

ইসলামপুরী

এটি শীতকালীন জাত। এ জাতের গাছে ও ফলে কাঁটা নেই। গাছের উচ্চতা মাঝারি ধরনের ও শাখা প্রশাখাযুক্ত। পাতার রং বেগুনী সবুজ। ফল গোলাকার, কচি অবস্থায় গাঢ় বেগুনী, পরিপক্ক অবস্থায় সবুজাভ বেগুনী। তবে কোন কোন সময় ত্বকে সবুজ বর্ণের ছোপ থাকতে পারে। ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু, বীজের সংখ্যা কম। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০-৪০০ গ্রাম। গড়ন ফলন ৩৬ টন/হেক্টর। গাছ প্রতি গড় ফল ধরার সংখ্যা ১৩টি।


খটখটিয়া

শীতকালে চাষ উপযোগী জাত। গাছ উচ্চতায় ও বিস্তৃতিতে মাঝারি, পাতা মাঝারী চওড়া। ফল দন্ডাকার ও কালচে বেগুনী। ফল লম্বায় ১৬-২০ সেমি. ও বেড়ে ৩.৫০-৫.৫০ সেমি.। প্রতিটি ফলের ওজন ১০০-১২৫ গ্রাম। গড় ফলন ২৯ টন/হেক্টর।


লাফফা- শীতকালীন জাত ফলের রং বেগুনী এবং গোলাকার। ফলের উপরিভাগ সামান্য খাদালো। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার একটি জনপ্রিয় জাত।
 

ঈশ্বরদি

এটি প্রধানত শীতকালীন জাত। তবে অন্যান্য সময়ও চাষ করলে কিছু ফলন পাওয়া যায়। গাছ কাটাময়, পাতা খাটো ও চওড়া ধরনের। ফল বড়, গোলাকার এবং রং সবুজ ও তার উপর হালকা ডোরা। ফলে বীজ খুব ও খুব সুস্বাদু নয়। এ জাতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব খুব কম। প্রতিটি ফলের ওজন ১৫০-২৫০ গ্রাম।
 

উত্তরা (বারি বেগুন ১)

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি উন্নত জাত। শীতকাল এ বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়। গাছের পাতা ও কাণ্ড হালকা বেগুনী এবং পাতার শিরাগুলো গাঢ় বেগুনী হয়। পাতার নীচের দিকে সামান্য নরম কাটা দেখা যায়। গাছ খাটো আকৃতির ও ছড়ানো হয়ে থাকে। প্রতি গুচেছ ৫-৬টি ফল ধরে। ফলের রং বেগুনী এবং ১৮-২০ সেমি. লম্বা। ফলের ত্বক খুব পাতলা, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু। হেক্টর প্রতি গড়ে ৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়। এ জাতটি ‘ঢলে পড়া’ নামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। গাছ প্রতি গড়ে ১৯৫টি ফল ধরে।
 

তাল বেগুন বা তল্লা বেগুন

গাছ উচ্চ, বিস্তৃতিতে কম, শাখা ও পাতার সংখ্যা কম। পাতা বড় ও চওড়া। ফল গোলাকার ও চ্যাপ্টাকৃতি। ফলের বেড় দৈর্ঘ্য অপেক্ষা বেশী। ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু, বীজের সংখ্যা মধ্যম। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০-৪০০ গ্রাম।


নয়ন কাজল প্রধানতঃ 

শীতকালীন জাত। গাছের উচ্চতা মাঝারী ধরনের ও শাখা প্রশাখা যুক্ত। ফল বেলুনাকৃতি, লম্বা ২০ সেমি. পর্যন্ত হতে পারে, ফলের রং হালকা সবুজ, বোঁটার কাছে হালকা বেগুনী। চোখের কাজলের মত আচড় আছে। সম্ভবতঃ এ কারণে জাতটির নাম নয়ন কাজল। একটি অধিক ফলনশীল জাত, ফলে বীজের পরিমাণ কম, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু। প্রতি ফলের ওজন ৩০০-৬০০ গ্রাম।
 

কেজি বেগুন

শীতকালীন জাত। গাছের উচ্চতা মাঝারি, পাতা চওড়া, ঢেউ খেলানো ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমান্বয়ে মোটা, অনেকটা লাউয়ের মত দেখতে হয়। ফলের রং হালকা সবুজ এবং গায়ে লম্বালম্বি হালকা আচড় আছে। বীজ অত্যন্ত কম, শাঁসালো, নরম এবং অত্যন্ত সুস্বাদু। বেগুন ভাজা, বেগুনী, চপ ইত্যাদি তৈরিতে এর জুড়ি নেই। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ১ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ কারণে এ জাতটি এখন খুব জনপ্রিয় নয়।
 

শিংনাথ

একটি বারমাসী জাত। গাছ বেশ উঁচু, পাশেও অধিক, শাখা প্রশাখার সংখ্যা প্রচুর। পাতা সরু ধরনের। এর ফল সরু, লম্বায় প্রায় ৩০ সেমি. ও বেগুনী রংয়ের। বেগুনের মধ্যে বীজ মাঝারি সংখ্যক, খেতে সুস্বাদু। এই জাতের বেগুনের মধ্যে কতকগুলি উপজাত আছে, যেগুলি ফলের আকার, আকৃতি, বর্ণের দিক থেকে পরষ্পর থেকে ভিন্ন। প্রতিটি ফলের ওজন ৭৫-১৫০ গ্রাম। প্রতিটি গাছে গড়ে ৩৯ টি বেগুন ধরে এবং গড় ফলন ৩০ টন/হেক্টর।
 

ঝুমকো-

 গাছ খাটো, খুবই ফলনশীল জাত। ফল খাটো, সরু ও ৮-১০ সেমি. লম্বা। বেগুন গাছের গুচ্ছভাবে উৎপন্ন হয়। ফলের ত্বক খুব পাতলা ও শাঁস মোলায়েম। ডগা ও ফলের মাজরা পোকার আক্রমণ কম হয়।
 

ডিম বেগুন

একটি উচ্চ ফলনশীল বারমাসী জাত। এ জাতে পোকার উপদ্রব খুব কম হয়। ফল ধবধবে সাদা, আকৃতিতে প্রায় ডিমের মত। প্রতিটি ফলের ওজন ৪০-৬০ গ্রাম।
 

মুক্তকেশী

এটি বারমাসী জাত, আগষ্ট (মধ্য শ্রাবণ-মধ্য ভাদ্র) মাস থেকে বেগুন বাজারে বিক্রয়ের জন্য উঠানো যায়। গাছ মাঝারী আকৃতির, ফল উপবৃত্তাকার ও চকচকে বেগুনী। প্রতিটি বেগুনের ওজন ১৫০-২৫০ গ্রাম।
 

শুকতারা

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি হাইব্রিড জাত। সুফলা ও উত্তরা জাতের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ফল বেগুনী, গড়ে ১৯ সেমি. লম্বা ও বেড় ৪ সেমি.। উচ্চফলনশীল, প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ৬০ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮০ টন ফলন পাওয়া যায়। সংকর জাতের কারণে এ জাতটি ঢলেপড়া নামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। কৃষকদের জমিতে উৎপন্ন বীজ থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী বছর বেগুন চাষ করা যাবে না। প্রতি বছরই বীজ নতুন করে সংগ্রহ করতে হবে।
 

তারাপুরী (বারি বেগুন ২)-

 বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত। ইসলামপুরী ও উত্তরা জাতের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত, শ্রাবণ-ভাদ্র মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ফল গাঢ় বেগুনী, প্রায় ১৬ সেমি. লম্বা ও বেড় ৬ সেমি.। উচ্চফলনশীল, প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ৯০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৮০ টন। এ জাতটি ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর নতুন করে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
 

কাজলা (বারি বেগুন ৪)

এটি একটি হাইব্রিড জাত। এ জাতের ফলের আকার লম্বা, রং কালচে বেগুনি, চকচকে। গাছ মাঝারি আকৃতির ছড়ানো। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৭০-৮০টি, প্রতিটি ফলের ওজন ৫৫-৬০ গ্রাম। জাতটি ঢলে পড়া রোগ সহনশীল। বীজ লাগানোর ৯০-৯৫ দিন পর ফল ধরে এবং ১৯০ দিন পর্যন্ত ফল ধরে। হেক্টর প্রতি ফলন ৫৫-৬০ টন।
 

নয়নতারা (বারি বেগুন ৫)

এ জাতের ফলের আকার গোল, রং লালচে বেগুনি। গাছ খাড়া আকৃতির। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ২৫-৩০টি, প্রতিটি ফলের ওজন ১২০-১৩০ গ্রাম। আগাম ফলন দেয়। জাতটি ঢলে পড়া রোগ ও বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ কিছুটা প্রতিরোধ করতে পারে। বীজ লাগানোর ৮০-৮৫ দিন পর ফল ধরে। হেক্টর প্রতি ফলন ৪৫-৫০ টন।
 

বিজয়

একটি হাইব্রিড জাত, সারা বৎসর চাষ করা যায়। গাছ ডালপালা বিশিষ্ট, সব শাখা প্রশাখায় বেগুন ধরে। ফল উপ গোলাকার, বেলুন আকৃতি, আকর্ষণীয় কালচে বেগুনী রং, বোঁটা সবুজ। ফলের ছাল পাতলা, খেতে সুস্বাদু। প্রচুর ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি বেগুনের গড় ওজন ১৭০ গ্রাম। চারা রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর থেকে বেগুন সংগ্রহ করা যায়। অনেক দিন যাবত ফলতে থাকে। চাষের জন্য প্রতি বছর নতুন বীজ সংগ্রহ করতে হয়।
 

চমক এফ১

এটি একটি হাইব্রিড জাত। আষাঢ় থেকে পৌষ মাসের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিন পর ফল ধরে। গাছ ও পাতা বড়, অনেক ডালপালা, বেগুন লম্বায় প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। পুতি গাছে ১৫-২০ কেজি ফল ধরে।

কাজল এফ১- বেগুন গোল, রং কালো, প্রতিটি বেগুনের ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম, গাছ বড় ও ঝোপালো।

                                                                                                                  (তথ্যসূত্রে-dae website)



সমস্ত বিভাগ
ফ্ল্যাশ বিক্রয়
আজকের ডিল