আগামী বছর আমে ভরপুর গাছ পেতে এখনই যা করবেন – অভিজ্ঞ চাষিদের কার্যকর টিপস!
প্রতিবছর আম গাছে প্রচুর ফল পেতে চাইলে জুলাই–আগস্ট মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ের পরিচর্যা, সঠিকভাবে সার প্রয়োগ ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করলে পরের মৌসুমে গাছে বেশি ফুল ধরে এবং ফলন অনেক বাড়ে।
চলুন জেনে নিই, এখন কী কী করণীয়, যাতে আগামী গ্রীষ্মে গাছে ঝুলে থাকে রসালো ও সুস্বাদু আম:
১. গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করুন
আম সংগ্রহের পর শুকিয়ে যাওয়া, আক্রান্ত ও মরা ডালগুলো কেটে ফেলুন।
এতে গাছে নতুন কুঁড়ি গজাবে এবং আগামী বছর ফুল ধরার উপযোগী শাখা তৈরি হবে।
২. গাছের নিচে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
নিচে পড়ে থাকা পাতা, পুরনো বোঁটা, ক্ষতিগ্রস্ত আম ও মরা ফুল সরিয়ে ফেলুন।
এতে রোগজীবাণু ও ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে।
৩. গাছের গোড়ার চারপাশ আগাছামুক্ত রাখুন
আগাছা গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করে ফেলে। তাই গোড়া থেকে ১-২ ফুট দূর পর্যন্ত এলাকা আগাছামুক্ত করুন।
৪. সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করুন
প্রতিটি গাছে সার প্রয়োগের পরিমাণ:
গোবর সার: ১০-২০ কেজি
ইউরিয়া: ২৫০ গ্রাম
টি.এস.পি.: ৩৫০ গ্রাম
এম.ও.পি.: ২৫০ গ্রাম
জিপসাম: ১৫০ গ্রাম (প্রয়োজনে)
সার দেওয়ার উপযুক্ত সময়:
বর্ষাকালের মাঝামাঝি – অর্থাৎ জুলাই থেকে আগস্ট
৫. মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে অর্গানিক ম্যাটার ব্যবহার করুন
গাছের গোড়ায় ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার বা শুকনো পাতা দিয়ে মালচ দিন।
এতে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং শিকড়ে সহজে পুষ্টি পৌঁছাবে।
৬. রোগ ও পোকা দমনের ব্যবস্থা নিন
ছত্রাক দমনে কপার অক্সিক্লোরাইড বা বোর্দো মিশ্রণ স্প্রে করুন।
পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ থাকলে সাইপারমেথ্রিন বা ডেল্টামেথ্রিন ব্যবহার করুন।
৭. ফুল আসার আগেই বোরন স্প্রে করুন
ফুলের পরিমাণ বাড়াতে ০.২% বোরিক অ্যাসিড স্প্রে আগস্ট–সেপ্টেম্বর মাসে দিন।
৮. মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান দিন
যদি সালফার, জিংক বা ম্যাগনেশিয়াম এর ঘাটতি ধরা পড়ে, তবে মাটিতে তা আলাদাভাবে মিশিয়ে দিন।
৯. গাছকে বিশ্রাম দিন – বাড়তি চাপ দেবেন না
এই সময় গাছকে অতিরিক্ত সার, পানি কিংবা হরমোন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, যাতে গাছ তার প্রাকৃতিক ছন্দে ফুল ধরতে পারে।
১০. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যান
নতুন পাতার বৃদ্ধি, ডালের স্বাস্থ্য, পোকামাকড়ের উপস্থিতি ও শিকড়ের অবস্থা নিয়মিত নজরে রাখুন।
শেষ কথা:
পরের বছর গাছে যদি প্রচুর আম চান, তবে এই মৌসুম থেকেই যত্ন নিতে হবে। মনে রাখবেন—আম গাছে ফল আসে আগের বছরের যত্নের ভিত্তিতে।
এই বর্ষায় যদি ছাঁটাই, সার দেওয়া, পরিস্কার ও সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন—আগামী বছর ফলন দেখে আপনি নিজেই আনন্দে অবাক হবেন!